18 anti-tobacco organizations gave reaction to the pricing of tobacco products in the budget proposal for the fiscal year 2020-21. Please read in Bengali below:
বাজেটে প্রস্তাবিত তামাক কর কাঠামো তামাক কোম্পানীকে লাভবান এবং জনগণ ও সরকারকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে
গত ১১ জুন জাতীয় সংসদে মাননীয় অর্থমন্ত্রী ২০২০-২১ অর্থ-বছরের বাজেট ঘোষণা করেছেন। প্রতি বছরের মত এবারো বাজেটে তামাকজাত দ্রব্যের মূল্য নির্ধারণ ও করারোপের প্রস্তাব করেছেন মাননীয় মন্ত্রী। এই প্রস্তাবের লক্ষ্য হিসাবে ‘তামাকজাত দ্রব্যের ব্যবহার কমানো এবং রাজস্ব আয় বৃদ্ধি’ বলে উল্লেখ করা হলেও এই প্রস্তাব দিয়ে দুটি লক্ষ্যের একটিও অর্জন সম্ভব নয় বরং এটি উল্টো ফল বয়ে আনবে।
মূল্য বৃদ্ধির ধরণ তামাক কোম্পানীকে লাভবান করবে এবং রাজস্ব ক্ষতি ও জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থায় নেতিবাচত প্রভাব বৃদ্ধির মাধ্যমে সরকার ও জনগণকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। প্রস্তাবে তামাকজাত দ্রব্যের ওপর সুনির্দিষ্ট কর আরোপ না করায় সরকার ১১ হাজার কোটি টাকা পর্যন্ত রাজস্ব হারাবে। প্রস্তাবে সিগারেটের মূল্য স্তর না কমানো এবং তামাকজাত দ্রব্যের দাম আগের মত রাখা বা নামমাত্র বৃদ্ধি এর ব্যবহার কমাতে কোন অবদান রাখবে না। বরং মানুষের ক্রয় সামর্থ বৃদ্ধি ও মূল্যস্ফিতির তুলনায় দাম বৃদ্ধি অনেক কম হওয়ার দেশে তামাকের ব্যবহার বাড়বে যা দেশের জনস্বাস্থ্য পরিস্থিতিকে নজিরবিহীন হুমকির মুখে ফেলবে। বিশেষ করে এই করোনা পরিস্থিতিতে তামাকের ব্যবহার বৃদ্ধি এবং জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থায় ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি করতে পারে। কারণ তামাকসেবীর করোনা আক্রান্তের সম্ভাবনা ১৪ গুন বেশি বলে বিবৃত করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাসহ অন্যান্য স্বাস্থ্য গবেষকগণ।
বাজেট প্রস্তাবে নিম্নস্তরে ১০ শলাকা সিগারেটের দাম মাত্র ২ টাকা বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে, এতে প্রতি শলাকায় দাম বাড়বে মাত্র ২০ পয়সা বা ৫.৪ শতাংশ অথচ একইসময়ে মানুষের মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি হয়েছে ১১.৬ শতাংশ। সিগারেট ধুমপায়ীদের ৭২ শতাংশই নিম্নস্তরের সিগারেটের ভোক্তা। নিম্ন স্তরে এই সামান্য দাম বৃদ্ধি এবং মধ্যম স্তরের দাম অপরির্তিত রাখায় তাদের ধূমপানের অভ্যাস আরো বাড়বে এবং আয় বৃদ্ধির তুলনায় পণ্যটি সস্তা হয়ে যাওয়ায় কিশোর-তরুণরা ধুমপানে উৎসাহিত হবে।
উচ্চ ও প্রিমিয়াম স্তর সিগারেটের মূল্য যথাক্রমে মাত্র ৪ টাকা ও ৫ টাকা দাম বৃদ্ধি একই ফল আনবে বরং এখানে কর হার বৃদ্ধি এবং সুনির্দিষ্ট কর আরোপ না করায় সরকার অতিরিক্ত রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হবে এবং তামাক কোম্পানীর লাভের পরিমাণ বদ্ধি পাবে।
বিড়ির ক্ষেত্রে, প্রতি শলাকা বিড়ির দাম বেড়েছে মাত্র ১৬ পয়সা। এই বৃদ্ধি তামাকজাত দ্রব্যের ব্যবহার কমাতে বা রাজস্ব আয় বৃদ্ধিতে কতটা অবদান রাখবে তা সহজেই অনুমেয়। বরং এখানেও কোম্পানীর লাভ প্রতি ২৫ শলাকা বিড়ির প্যাকেটে ২ টাকা ১৬ পয়সা বাড়বে।
জর্দার মূল্য বৃদ্ধি সন্তোষজনক হলেও গুলের মূল্য সামান্য বৃদ্ধি এবং পণ্য দটির ওপর সুনির্দিষ্ট কর আরোপ না করায় এখানেও উৎপাদনকারী কোস্পানীর লাভ বাড়ছে প্রতি ১০ গ্রাম জর্দায় ১ টাকা ৪০ পয়সা এবং গুলে ৭০ পয়সা।
সার্বিক বিবেচনায় তামাকজাত দ্রব্যের ব্যবহার কমানো বা রাজস্ব বৃদ্ধি নয় বরং এই বাজেট প্রস্তাব করার মাধ্যমে মাননীয় অর্থমন্ত্রী আরো একটি ‘তামাক কোম্পানীর লাভের বাজেট’ ঘোষণা করলেন।
একইসঙ্গে তামাক বিরোধী সংগঠনগুলোর দেয়া তামাক কর প্রস্তাবও আমলে নেয়া হয়নি। তামাক বিরোধী সংগঠনগুলোর সুপারিশ অনুসারে তামাকজাত দ্রব্যের মূল্য ও কর নির্ধারণ, সুনির্দিষ্ট কর আরোপ এবং সিগারেটের মূল্যস্তর চারটির পরিবর্তে দুইটি নির্ধারণ করা হলে ২০ লক্ষ ধুমপায়ী ধূমপান ছেড়ে দিবে। প্রস্তাবিত হার ও পদ্ধতিতে করারোপের ফলে ধোঁয়াবিহীন তামাক ব্যবহারকারীর সংখ্যাও উল্লেখযোগ্য হারে কমে আসবে। এতে দীর্ঘ মেয়াদে ৬ লক্ষ ধূমপায়ীর জীবন রক্ষা হবে। একইসঙ্গে রাজস্ব আয় প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা পর্যন্ত বৃদ্ধি পাবে। প্রথম বছরেই যার হার হবে বিড়ি ও সিগারেট থেকে প্রাপ্ত বর্তমান কর রাজস্বের চেয়ে অন্তত ১৪% বেশি। সরকারের কাছে তামাক করের এ প্রস্তাব বারবার হস্তান্তর করা হলেও এ বাজেটে তার কোনো প্রতিফলন নেই।
অন্যদিকে গত বছরের মত এবারের প্রস্তাবেও তামাক রপ্তানি উৎসাহিত করতে তামাক রপ্তানি শুল্ক শুণ্য ভাগ রাখা হয়েছে । এরফলে তামাক চাষ বৃদ্ধি পাবে, দেশের খাদ্য নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়বে এবং করোনা ভাইরাস মহামারী পরবর্তী সময়ে দেশের খাদ্য সংকট মোকাবেলায় বাধার সৃষ্টি করবে।
আমরা জানি করোনা ভাইরাসের কারণে সৃষ্ট মহামারীর কারণে দেশ এক ভয়াবহ অর্থনৈতিক ক্ষতির মুখে পড়তে যাচ্ছে। এই ক্ষতি পোষানোর জন্য সরকারের প্রয়োজন অতিরিক্ত রাজস্ব আয়। এই অতিরিক্ত আয় করোনার অর্থনৈতিক ক্ষতি পোষাতে সহায়ক ভূমিকা রাখবে। কিন্তু সুযোগ থাকা সত্ত্বেও অতিরিক্ত রাজস্ব আয় এবং তামাকপণ্যের ব্যবহার নিরুৎসাহিত করতে প্রস্তাবিত বাজেটে কার্যকর মূল্য বৃদ্ধির ও করারোপের সুযোগ উপেক্ষা করা হয়েছে। যার ফলে মানুষ নজিরবিহীন স্বাস্থ্যঝুঁকির মুখে পড়বে। একইসঙ্গে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুত ২০৪০ সালের মধ্যে তামাকমুক্ত বাংলাদেশ অর্জনের লক্ষ্যও বাধাগ্রস্ত হবে।
বিবৃতি প্রেরণকারী সংগঠনসমূহ
এইড ফাউন্ডেশন, আর্ক ফাউন্ডেশন, বাংলাদেশ ক্যানসার সোসাইটি, বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোট (বাটা), বিসিসিপি, বাংলাদেশ নেটওয়ার্ক ফর টোব্যাকো ট্যাক্স পলিসি (বিএনটিটিপি), ঢাকা আহসানিয়া মিশন, ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, গ্রামবাংলা উন্নয়ন কমিটি, নাটাব, ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন, প্রত্যাশা মাদক বিরোধী সংগঠন, প্রজ্ঞা, সুশাসনের জন্য প্রচারাভিযান (সুপ্র), তামাক বিরোধী নারী জোট (তাবিনাজ), টোব্যাকো কন্ট্রোল এন্ড রিসার্চ সেল, ডব্লিউবিবি ট্রাস্ট ও ইপসা।