The price of Jarda did not increase as per the budget FY 2020-21, says research results. Please read the result in Bengali.

বাংলাদেশের প্রায় সকল জর্দা ফ্যাক্টরী ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেট উপেক্ষা করে জর্দা বাজারজাত করছে। উপরন্তু, মাথাপিছু আয় ও মুদ্রাস্ফ্রীতি অনুযায়ী জর্দার দাম বাড়ানো হয়নি বিধায় এ বাজেট জর্দ্দার বাজার এবং বিক্রতাদের ওপর কোনো প্রভাব ফেলেনি। সম্প্রতি “বাজেট পরর্বতী জর্দ্দার মূল্য বৃদ্ধি” সংক্রান্ত এক গবেষণায় এমন তথ্য উঠে এসেছে। আজ (৮ সেপ্টেম্বর, ২০২০) সোমবার বেলা ১১টায় মিটিং সফটওয়্যার জুমের মাধ্যমে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে গবেষণা ফলাফল প্রকাশ করা হয়। এইড ফাউন্ডেশন, বাংলাদেশ নেটওয়ার্ক ফর টোব্যাকো ট্রাক্স পলিসি, গ্রাম বাংলা উন্নয়ন কমিটি, জাতীয় যক্ষা নিরোধ সমিতি, ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট ও টোব্যাকো কন্ট্রোল অ্যান্ড রিসার্চ সেল-ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি যৌথভাবে এ গবেষণা পরিচালনা করে।

২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেট পাশ হবার ৩০ দিন পর উদ্দেশ্যমূলকভাবে দেশের ৬টি জেলা (ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, ময়মনসিংহ, ঝিনাইদহ ও মেহেরপুর) শহরের মূল পাইকারি বাজারের পাইকারি দোকান হতে একই সময়ে এই গবেষণার তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। জর্দ্দার বর্তমান বিক্রয় মূল্য ও বাজেট পূর্ববর্তী বিক্রয় মূল্য নিয়ে করা এ গবেষণায় মোট ১২৫টি জর্দ্দার তথ্য সংগ্রহ করা হয়।

গবেষণার ফলাফলে বলা হয়েছে, বাজেটের আগে যে মূল্য ছিল বাজেটের পরেও অধিকাংশ জর্দ্দার ক্ষেত্রেই পূর্বের মূল্য বহাল রয়েছে। বাজেটের পরবর্তী সময়ে মাত্র ০.৪৩ শতাংশ জর্দ্দার মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। অপরদিকে যে কয়েকটি জর্দ্দার মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে, সেগুলো পূর্বের মূল্য থেকে মাত্র ১ থেকে ২টাকা পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে। মাত্র কয়েকটিতে এই বৃদ্ধির পরিমাণ ছিল ৫টাকা। গড়ে এই দাম বৃদ্ধির হার মাত্র ১.৭২ টাকা। বর্তমান মুদ্রাস্ফীতিতে ১ টাকা, ২ টাকা, ৫ টাকা, ১০ টাকা বাস্তবে ক্রেতাদের উপর কোন প্রভাবই ফেলতে পারে না।

গবেষণায় আরো দেখা গেছে, পাসকৃত বাজেট মূল্য অনুযায়ী জর্দ্দা বিক্রয়ের হার ০%। অর্থাৎ, সংগ্রহকৃত ১২৫টি জর্দ্দার কোনটিই ২০২০-২১ অর্থ বছরে পাশকৃত বাজেটে উল্লেখকৃত মূল্যে বিক্রয় করা হচ্ছে না। সুতরাং এ ফলাফলে এটিই প্রতীয়মাণ হয় যে, মূলত জর্দ্দার বাজারে বাজেটের কোনই প্রভাব পড়েনি, এমনকি প্রভাব পরেনি বিক্রেতাদের উপরও । তবে, বাজেট অনুযায়ী মূল্য বৃদ্ধি করা হলে তা রাজস্ব বোর্ডের কর বৃদ্ধিতে সহায়ক হতো। এবং পাশাপাশি ভোক্তাদের ব্যবহারেও প্রভাব ফেলতে পারতো।

বাজেট অনুযায়ী ৫ গ্রাম জর্দ্দার মূল্য ২০ টাকা হওয়ার কথা থাকলেও বাজারে প্রাপ্ত এসকল জর্দ্দার মূল্য ছিল ৩ টাকা থেকে ১৬ টাকা। পাশাপাশি বাজেট অনুযায়ী ১০ গ্রাম জর্দ্দার মূল্য ৪০ টাকা হওয়ার কথা থাকলেও বাজার ঘুরে দেখা যায় অধিকাংশ ১০ গ্রাম জর্দ্দা বিক্রয় করা হচ্ছে ৮ টাকা থেকে ২০ টাকায়। একই চিত্র প্রায় সকল জর্দ্দার ক্ষেত্রেই। ফলে বাজেটে ধোঁয়াবিহীন তামাকের মূল্য বৃদ্ধি করা হলেও বাস্তবে তা মানা হচ্ছে না। এর প্রধান কারণ ধোঁয়াবিহীন তামাকের সঠিক মনিটরিং ব্যবস্থা না থাকা বলেও গবেষণায় উঠে এসেছে।

গবেষণা প্রতিবেদনে পরিস্থিতির উন্নয়নে বেশকিছু সুপারিশ করা হয়েছে। সুপারিশগুলো হলো: ধোঁয়াবিহীন তামাকপণ্যের রাজস্ব বৃদ্ধি এবং রাজস্ব আদায়ে মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদার করা; সঠিক মনিটরিং এর জন্য ধোঁয়াবিহীন তামাকপণ্যকে স্ট্যান্ডার্ড প্যাকেজিং-এর আওতায় আনা; রাজস্ব ফাঁকি রোধে প্রতিটি ধোঁয়াবিহীন তামাকপণ্য বারকোড পদ্ধতিতে কর আদায়ের ব্যবস্থা গ্রহণ করা; ধোঁয়াবিহীন তামাকপণ্যের সর্বনিন্ম ওজন ও সর্বনিন্ম মূল্য নির্ধারণ করে দেওয়া; নির্ধারিত মূল্যে পণ্য বিক্রয় করা না হলে কোম্পানির বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা।

এছাড়া মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদার করতে এবং সঠিক পদ্ধতিতে কর আদায় করতে প্রতিটি এলাকায় তামাকপণ্যের পরিবেশককে টার্গেট করে ছোট-বড় সকল তামাক কোম্পানিকে তালিকাভুক্ত করা; তালিকা অনুযায়ী অনিবন্ধিত তামাক কোম্পানিকে নিবন্ধনের জন্য নিদির্ষ্ট সময় বেঁেধ দেওয়া এবং নিদির্ষ্ট সময় পরপর নিবন্ধন রি-ইস্যু বাধ্যতামূলক করা; নিদির্ষ্ট সময়ের মধ্যে যেসকল তামাক কোম্পানি নিবন্ধন না করবে তাদের পন্য ধ্বংস ও বাজেয়াপ্ত করা, সেই সাথে তাদেরকে অর্থদন্ড ও কারাদন্ডের মাধ্যমে শাস্তির ব্যবস্থা করা; নিবন্ধনে উল্লেখিত ব্র্যান্ড বাদে অন্য কোন ব্র্যান্ড বাজারে পেলে এবং নিবন্ধনে উল্লেখিত এলাকা বাদে অন্য এলাকায় ঐ পণ্য পেলে সেই পণ্য ধ্বংস ও বাজেয়াপ্ত করা, সেই সাথে তাদেরকে অর্থদন্ড ও কারাদন্ডের মাধ্যমে শাস্তির ব্যবস্থা করা, প্রয়োজনে কোম্পানির লাইসেন্স বাতিল করার সুপারিশ করা হয়েছে।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান ড. মো. নাসির উদ্দিন আহমেদ এর সভাপতিত্বে সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন নাটাব এর নির্বাহী পরিচালক মো. কামাল উদ্দিন, অর্থনৈতিক গবেষণা ব্যুরো’র প্রকল্প সমন্বয়কারী অধ্যাপক ড. রুমানা হক, বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোটের সমন্বয়কারী সাইফুদ্দিন আহমেদ, তামাক বিরোধী নারী জোটের সমন্বয়কারী ফরিদা আখতার, দি ইউনিয়নের কারিগরী পরামর্শক এড. সৈয়দ মাহবুবুল আলম প্রমূখ। সংবাদ সম্মেলনে গবেষণা ফলাফল উপস্থাপন করেন টিসিআরসি’র প্রোগ্রাম ম্যানেজার ফারহানা জামান লিজা এবং সঞ্চালনা করেন টিসিআরসি’র সদস্য সচিব ও সহযোগী অধ্যাপক মো. বজলুর রহমান।

8 September, 2020