তামাকজাত দ্রব্য বিক্রয়কেন্দ্রের নিবন্ধন বাধ্যতামূলক করেছে স্থানীয় সরকার। কিন্তু তামাক কোম্পানিগুলো স্থানীয় সরকারের এ সিদ্ধান্তের বিরোধীতা করে আসায় এবং ক্রমাগত তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন লঙ্ঘন করায় এ কার্যক্রম পূর্ণমাত্রায় বাস্তবায়ন করা সম্ভব হচ্ছে না। তামাক কোম্পানিগুলো দাবি করে আসছে সারাদেশে তামাকজাত দ্রব্যের বিক্রয়কেন্দ্রগুলো নিবন্ধনের আওতায় নিয়ে আসলে তাদের লোকবল কমে যাবে। ৫০ লক্ষাধিক মানুষ বেকার হয়ে যাবে যা বাস্তব সম্মত নয়। প্রশ্ন হলো তামাক কোম্পানিগুলো বিক্রয়কেন্দ্রের নিবন্ধন নেয়ার বিরোধীতা করছে কেনো?
- যত্রতত্র তামাকজাত দ্রব্য বিক্রি করতে পারে।
- স্কুল, কলেজসহ সব ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাশে বিনা বাঁধায় তামাকজাত দ্রব্য বিক্রি করতে পারে।
- কোনো বিক্রয়কেন্দ্রের নিবন্ধন না থাকায় তামাক কোম্পানি অপ্রাপ্তদের কাছে সিগারেট বিক্রি এবং অনেক সময় অপ্রাপ্ত বয়স্কদের দিয়েও সিগারেট বিক্রি করতে পারে।
- সর্বোচ্চ খুচরা মূল্যের চেয়ে বেশি দামে বিক্রি করে বছরে প্রায় ৫০০০ কোটি টাকার বেশি রাজস্ব ফাঁকি দিতে পারে। যার সঙ্গে সরাসরি তামাক কোম্পানিগুলো জড়িত।
- নিবন্ধনের আওতায় নিয়ে এলে নিবন্ধনকারীদের বাইরের কেউ তামাকজাত দ্রব্য বিক্রি করতে পারবে না। একইসঙ্গে রাজস্ব ফাঁকির প্রবণতা নিয়ন্ত্রণের মধ্যে নিয়ে আসা সম্ভব হবে।
- খুচরা শলাকায় সিগারেট বিক্রি বেশি করতে পারে।
- শিশু-কিশোরদের আকৃষ্ট করতে স্কুলের আশপাশে সিগারেটের বিজ্ঞাপন দেখাতে পারে এবং ভবিষ্যতের ভোক্তা তৈরিতে প্রচারণা চালায়।
খুচরা শলাকায় বিক্রিতে লাভবান কোম্পানি
তামাক কোম্পানিগুলো সর্বোচ্চ খুচরা মূল্যের চেয়ে বেশি দামে সিগারেট বিক্রি করে প্রতি বছর প্রায় ৫০০০ কোটি টাকা রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে আসছে। সরকার নানাভাবে তাদেরকে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করলেও উদ্দেশ্যমূলকভাবে তারা আইন লঙ্ঘন করছে। ফলে বিক্রয়কেন্দ্রের লাইসেন্স নেয়া বাধ্যতামূলক হলে তামাক কোম্পানিগুলোকে সহজেই নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হতো। কিন্তু তামাক কোম্পানি রাজস্ব ফাঁকি দিতে এবং খুচরা শলাকায় সিগারেট বিক্রির মাধ্যমে ভোক্তাদের নাগালের মধ্যে সিগারেট সরবরাহ করতে এ আইনের বিরোধীতা করছে।
খুচরা বিক্রয়কেন্দ্র কতোগুলো?
হকার্স সমিতির তথ্য বলছে, ঢাকায় ৪ লক্ষ খুচরা বিক্রয়কেন্দ্র রয়েছে। এর মধ্যে তামাকজাতদ্রব্য বিক্রি হয় ১০ শতাংশের চেয়ে কম বিক্রয়কেন্দ্র।
বাংলাদেশে তামাক নিয়ন্ত্রণে কর্মরত নাটাব, এইড ফাউন্ডেশন ও গ্রাম বাংলা উন্নয়ন কমিটির অনুসন্ধানে দেখা গেছে বরিশাল সিটি করপোরেশনসহ ১৮টি পোরসভায় মাত্র ২১৫৪৯টি দোকানে তামাকজাত দ্রব্য বিক্রি হয়। রাজশাহী ও খুলনা সিটি করপোরেশনসহ ১৫টি পৌরসভায় ৮৯২৬টি এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটির পাঁচটি এলাকা, গাজীপুর সিটি এবং ময়মনসিংহ সিটিসহ ১২টি পৌরসভায় ৩০৪১টি বিক্রয়কেন্দ্রে তামাকজাত দ্রব্য বিক্রির তথ্য পাওয়া গেছে। অথচ এসব সিটি করপোরেশন ও পৌরসভায় বিভাগে লক্ষ লক্ষ বিক্রয়কেন্দ্র রয়েছে। যেখানে কোনো তামাকপণ্য বিক্রি হয় না।
নিবন্ধনের ফলে সরকার যেভাবে লাভবান হতে পারে
- সরকারের আইনের প্রয়োগ সহজ হবে;
- তামাক কোম্পানি কর্তৃক রাজস্ব ফাঁকি কমে আসবে;
- সরকারের রাজস্ব বৃদ্ধি পাবে;
- তামাকজাত দ্রব্যের ক্ষতিকর প্রভাব কমে আসবে;
- তরুণ প্রজন্ম তামাক গ্রহণে নিরুৎসাহি হবে;
- খুচরা শলাকা বিক্রি নিষিদ্ধ করা সম্ভব হবে।