বিশ্বব্যাপী অকাল মৃত্যু এবং রোগের অন্যতম প্রধান কারণ হলো তামাক ও তামাকজাত পণ্যের ব্যবহার। “তামাক সম্পর্কিত রোগের কারণে বিশ্বব্যাপী প্রতিবছর প্রায় ৫৪ লাখ মানুষ মারা যাচ্ছে। আশক্ষা করা হচ্ছে যে, ২০০০ সাল নাগাদ বিশ্বব্যাপী তামাক সম্পর্কিত রোগের কারণে বার্ষিক মৃত্যু সংখ্যা বেড়ে গিয়ে প্রায় ৮০ লাখে পৌঁছবে। যদি তামাকপণ্য ব্যবহারে কোনো নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা আরোপ না করা হয় তাহলে এই শতাব্দীতে শুধুমাত্র তামাকজনিত রোগে প্রায় ১০ কোটি লোক মারা যাবে এবং এই মৃত্যুর প্রায় ৭৫ শতাংশেরও বেশি নিম্ন ও নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশে সংঘটিত হবে” (Mathers and Lonear 2006)।
তামাক পণ্যের ব্যবহার প্রতিরোধযোগ্য মৃত্যুর সর্বপ্রধান কারণ যার মধ্যে ক্যান্সার, হৃদরোগ, স্ট্রোক, দীর্ঘকালীন শ্বাসনালীর রোগ এবং অন্যান্য অ-সংক্রামক রোগ অন্তর্ভুক্ত। একই সাথে আশার বিষয় এই যে, এসব রোগের প্রাদুর্ভাবের হার নিশ্চিতরূপে কমিয়ে আনার কর্মপন্থা বর্তমানে সহজল কিন্তু এসব কর্মপন্থা বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজন বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সরকারের সদিচ্ছা ও জনসচেতনতা বৃদ্ধি। যদি বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সরকারসমূহ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কর্তৃক প্রণীত MPOWER নীতিমালায় বর্ণিত কৌশলসমূহ (তামাক পণ্য ব্যবহার ও প্রতিরোধ নীতিমালা পর্যবেক্ষণ করা; ধোঁয়াজাত তামাক পণ্য হতে জনসাধারণকে রক্ষা করা, তামাক পণ্য ব্যবহার ত্যাগে সাহায্য করা, তামাকের ক্ষতি সম্পর্কে সতর্ক করা; তামাকের বিজ্ঞাপন ও প্রচার নিষিদ্ধ করা; তামাক পণ্যের উপর কর বৃদ্ধি করা) বাস্তবায়নে সচেষ্ট হয় তবেই তামাকজনিত মৃত্যুহার বিশ্বব্যাপী কমিয়ে আনা সম্ভব হবে।
বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম তামাক উৎপাদনকারী ও ভোগকারী দেশ। ২০১৭ সালের GATS প্রতিবেদন অনুযায়ী বাংলাদেশে প্রায় ১ কোটি ৯২ লাখ লোক কমপক্ষে যেকোনো একটি তামাক পণ্য
ব্যবহার করে থাকে। উদ্বেগের বিষয় হলো ২০০৯ হতে ২০১৭ সাল পর্যন্ত শুধু সিগারেট ধূমপায়ীর সংখ্যা ১ কোটি ৩৫ লাখ হতে বৃদ্ধি পেয়ে ১ কোটি ৫০ লাখে উন্নীত হয়। তাই এ প্রবন্ধে বিদ্যমান সিগারেট কর ব্যবস্থা ও সিগারেটের অবাধ ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে কার্যকর উপায়সমূহ সম্পর্কে বিশেষভাবে আলোকপাত করা হয়েছে। তামাক ব্যবহারকারী এ বিপুল জনগোষ্ঠী স্বাস্থ্যঝুঁকির দ্বারপ্রান্তে রয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার Global Disease Burden প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে যে, শুধুমাত্র তামাক পণ্য ব্যবহারের কারণে বাংলাদেশে প্রতি বছর প্রায় ১ লাখ ৬১ হাজার মানুষ মারা যাচ্ছে। তামাক পণ্যের অবাধ ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ তাই সময়ের দাবি। অন্যথায় শুধুমাত্র তামাতদৃষ্ট স্বাস্থ্য বিপর্যয়ের কারণেই বাংলাদেশ সরকার ২০৩০ সাল নাগাদ টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার অতীষ্ট স্বাস্থ্য নির্দেশক অর্জনে ব্যর্থ হবে।
শুধুমাত্র স্বাস্থ্য বিপর্যয় নয় বরং তামাক চাষ ও বরকর তামাক পণ্য ব্যবহারের কারণে সৃষ্ট পরিবেশগত বিপর্যয়ও সমভাবেউল্লেখযোগ্য। তাই এই গবেষণা প্রবন্ধে বাংলাদেশে তামাক ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে গৃহীত কার্যক্রমের বর্ণনা ও তার মূল্যায়ন এবং ভবিষ্যৎ করণীয় সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। সাম্প্রতিককালে তামাক নিয়ন্ত্রণ আন্দোলন মানবসম্পদ উন্নয়নের আন্দোলনে পরিণত হয়েছে। কেননা এ আন্দোলন তামাকজনিত রোগের কারণে সংঘটিত অকাল মৃত্যুজনিত ক্ষতি, শারীরিক অক্ষমতাজনিত ক্ষতি এবং এ রোগসমূহের চিকিৎসা বাবদ খরচের ক্ষতিসমূহই হ্রাস করতে সচেষ্ট হয় না, বরং সুস্থ জীবন প্রদানের মাধ্যমে জীবন ও জীবিকার উন্নয়নেও সহায়ক ভূমিকা পালন করে। সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা যায় যে, শুধুমাত্র বিশ্বব্যাপী তামাকের কারণে উদ্ভূত ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়ায় সারা বিশ্বের মোট জিডিপির প্রায় ২ শতাংশ (ঞড়নধপপড় অঃষধং ২০১৮)। যদি এই বিপুল সম্পদের অপচয় বন্ধ করে তা উন্নত শিক্ষা ও স্বাস্থ্য সেবায় বিনিয়োগ করা হতো তবে নিঃসন্দেহে তা মানুষের জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধিতে সহায়ক হতো।
To read the full paper, please click the download link.
মারুফ আহমেদ