প্রারম্ভিক:
জনস্বাস্থ্য রক্ষায় তামাক পণ্যের উপর কর বৃদ্ধি তামাক নিয়ন্ত্রণের অন্যতম প্রধান উপায় হিসেবে সারা বিশ্বে সুপরিচিত। তামাকপণ্যের কর বৃদ্ধি একই সাথে ব্যবহারকারীর সংখ্যা কমাতে যেমন কার্যকর, তেমনি দেশে রাজস্ব বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে।
গ্লোবাল এ্যাডাল্ট টোব্যাকো সার্ভে ২০১৭ এর তথ্যানুযায়ী, বাংলাদেশে মোট প্রায় ৩ কোটি ৭৮ লক্ষ (৩৫.৩%) মানুষ তামাক ব্যবহার করে। এর মধ্যে ধোঁয়াবিহীন তামাক ব্যবহারকারীর সংখ্যা ২ কোটি ২০ লক্ষ (২০%), যেখানে ধোঁয়াযুক্ত তামাক ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১ কোটি ৯২ লক্ষ (১৮%)। অর্থাৎ বাংলাদেশের বিপুল সংখ্যক জনগোষ্ঠী ধোঁয়াবিহীন তামাকপণ্য (জর্দ্দা, গুল ইত্যাদি চর্বণযোগ্য তামাকপণ্য) ব্যবহার করে। তবে নানা কারণে ধোঁয়াবিহীন তামাকপণ্য থেকে কম শুল্ক আদায় হওয়ায় এর কর বৃদ্ধির বিষয়টি কখনোই গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করা হয় না। যার ফলে মোটা অংকের রাজস্ব হারাচ্ছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড। এমতাবস্থায়, এসকল জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্য সুরক্ষার করা বিবেচনা করে ধোঁয়াবিহীন তামাক পণ্যের কর বৃদ্ধির জন্য দীর্ঘদিন ধরে তামাক বিরোধী সংগঠনগুলো দাবি জানালেও প্রতি বছরই হতাশ হতে হচ্ছে তাদের। তবে এর মধ্যেও আশার কথা হচ্ছে ২০২০-২১ অর্থ বছরে ধোঁয়াবিহীন তামাক পণ্যের কর কিছুটা বেড়েছে। তবে তা কতটুকু বাস্তবায়ন হচ্ছে এবং মূল্য বৃদ্ধি হলেও তা ক্রেতার উপরে কেমন প্রভাব ফেলছে তা জানতেই এ গবেষণা।
গবেষণার উদ্দেশ্য:
২০২০-২১ অর্থ বছরের বাজেটে প্রতি ১০ গ্রাম জর্দার দাম ১০ টাকা বাড়িয়ে ৪০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে তার কতটুকু বাস্তবায়ন হচ্ছে তা পর্যবেক্ষণের জন্য তামাক নিয়ন্ত্রণে কার্যরত কয়েকটি সংগঠন মিলে দেশের ৬টি জেলা থেকে জর্দ্দার মূল্যের বাজেট পূর্ববর্তী ও বাজেট পরবর্তী অবস্থার তথ্য সংগ্রহ করেন। তারই প্রেক্ষিতে পাওয়া তথ্য নিয়েই এই গবেষণার ফলাফল নির্ণয় করা হয়েছে। সংগ্রহীত বিভিন্ন ওজনের এই জর্দ্দার যে মূল্যে বিক্রয় করা হচ্ছে ব্র্যান্ড ভেদে তার পার্থক্য লক্ষণীয়। বাজারে জর্দ্দার মূল্য এতটাই কম যে এর মূল্য বৃদ্ধি হলেও তা ক্রেতার উপরে কোন রকম প্রভাব পরে না।
গবেষণা পদ্ধতি, স্থান ও সময়কাল:
এটি মূলত একটি পর্যবেক্ষণমূলক গবেষণা। Primary Database পদ্ধতিতে তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করা হয় এবং পরবর্তীতে গবেষণাটি সম্পাদনের লক্ষ্যে Qualitative and Quantitative পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়েছে। ২০২০-২১ অর্থ বছরের বাজেট পাশ হবার ৩০ দিন পর অর্থাৎ ২০২০ সালের আগষ্ট মাসে দেশের ৬টি জেলা (Randomly Selected) তথা ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, ময়মনসিংহ, ঝিনাইদহ ও মেহেরপুর-এর জেলা শহরের মূল পাইকারি বাজারের পাইকারি দোকান হতে একই সময়ে এই গবেষণার জন্য তথ্য সংগ্রহ করা হয়।
গবেষণার ফলাফল:
দেশের ৬টি জেলা থেকে জর্দ্দার বর্তমান বিক্রয় মূল্য ও বাজেট পূর্ববর্তী বিক্রয় মূল্য নিয়ে করা এ গবেষণায় মোট ১২৫টি জর্দ্দার তথ্য সংগ্রহ করা হয়। গবেষণায় দেখা যায়, বাজেটের আগে যে মূল্য ছিল বাজেটের পরেও অধিকাংশ জর্দ্দার ক্ষেত্রেই পূর্বের মূল্য বহাল রয়েছে। বাজেটের পরবর্তী সময়ে মাত্র ০.৪৩ শতাংশ জর্দ্দার মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। অপরদিকে যে কয়েকটি জর্দ্দার মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে, সেগুলো পূর্বের মূল্য থেকে মাত্র ১টাকা থেকে ২টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে। মাত্র গুটি কয়েকটিতে এই বৃদ্ধির পরিমাণ ছিল ৫টাকা। গড়ে এই বৃদ্ধির হার মাত্র ১.৭২ টাকা। যা ক্রেতাদের উপর যেমন কোন প্রভাব ফেলতে পারেনি, তেমনি প্রভাব পরেনি বিক্রেতাদের উপরও। গবেষণায় আরো দেখা যায়, মাত্র ৪% জর্দ্দার মূল্য পাশকৃত বাজেট মূল্যের সমান। অর্থাৎ ১২৫টি জর্দ্দার মধ্যে মাত্র ৫টি জর্দ্দা বাজেটে উল্লেখকৃত মূল্যের সমমান। এর মধ্যে ৩টি ৫গ্রাম ওজনের জর্দ্দা যার বিক্রয়মূল্য ২০ টাকা এবং ২টি ১০ গ্রামের জর্দ্দা, যাদেও একটির বিক্রয়মূল্য ৫০ টাকা ও আরেকটির বিক্রয়মূল্য ১০০ টাকা। সুতরাং এ ফলাফলে এটিই প্রতীয়মাণ হয় যে, মূলত জর্দ্দার বাজারে বাজেটের কোনই প্রভাব পরেনি। অথচ বাজেট অনুযায়ী মূল্য বৃদ্ধি করা হলে তা রাজস্ব বোর্ডের কর বৃদ্ধিতে সহায়ক হতো। এবং পাশাপাশি ভোক্তাদের ব্যবহারেও প্রভাব ফেলতে পারতো।
দেশের অধিকাংশ জর্দ্দার মূল্য অনেক কম হওয়ায় তা ভোক্তার জন্য যেমন সহজলভ্য তেমনি এর মূল্য বৃদ্ধি করলেও তা ভোক্তার জন্য খুব বেশি বোঝা হয়ে যায় না। এই গবেষণায় দেখা গেছে সাধারণত জর্দ্দার মোড়ক গুলি ৫ গ্রাম থেকে ১০ গ্রামেরই বেশি হয়ে থাকে। এছাড়া ১৫, ২০, ২৫, ৩০, ৪০, ৫০, ৬০, ৭০, ১০০, ১৫০, ২০০ বিভিন্ন ওজনের হয়ে থাকলেও এগুলোর মূল্য খুবই কম। আবার ওজন একই হলেও ব্র্যান্ড ভেদে মূল্যের তারতম্য লক্ষ্য করা যায়। বাজেট অনুযায়ী ৫ গ্রাম জর্দ্দার মূল্য ২০ টাকা হওয়ার কথা থাকলেও বাজাওে প্রাপ্ত এসকল জর্দ্দার মূল্য ছিল ৫ টাকা থেকে ৫০ টাকা। মোড়ক ভেদেও এই মূল্য কম বেশি হয়ে থাকে।
পুরো গবেষণাটি পড়তে নিচের ডাউনলোড অপশনে ক্লিক করুন …
বাজেট পরর্বতী জর্দ্দার মূল্য বৃদ্ধি সংক্রান্ত গবেষণার ফলাফল